সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় ৮০০ নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: রিজভী নির্বাচন কবে, সেই ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকেই : প্রেস উইং মোহাম্মদপুরে সন্ত্রাসী রহিম ও তার ছেলের অত্যাচার নির্যাতনে অসহায় এলাকাবাসী উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অপসারনের দাবিতে রাজপথে বিল্পবী ছাত্র জনতা ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৪ হাজার সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে দেখে কেঁদে ফেললেন মির্জা ফখরুল সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ওসমানী জাতীয় স্মৃতি পরিষদ-এর বিশেষ বাণী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খ. ম. আমীর আলী ছাত্র বৈষম্য আন্দোলনে আহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে পাশে বিএনপি নেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানক্লাব ‘নেবুলাস’-এর যাত্রা শুরু
তিন অধিনায়ক নিয়ে রোডসের ত্রিকোণমিতি

তিন অধিনায়ক নিয়ে রোডসের ত্রিকোণমিতি

ক্রীড়া ডেস্কঃ ছুটি গল্পে কিশোর মনোস্তত্ত্ব বোঝাতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘তের-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মত পৃথিবীতে অমন বালাই আর নাই।’ স্টিভ রোডসকে এই গল্পের অনুবাদটা পড়াতে পারলে তিনি হয়তো বলতেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ হওয়ার মতো হেপা পৃথিবীতে আর কোনো চাকরিতে নেই! একদিকে সাফল্যক্ষুধায় কাতর সমর্থক এবং প্রশাসক গোষ্ঠী, তাদের পালে হাওয়া দেওয়া গণমাধ্যম। অন্যদিকে দুর্বল অবকাঠামো আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজহীন ঘরোয়া ক্রিকেট। এর ভেতর থেকেই আপন প্রতিভার জোরে, জেদকে সঙ্গী করে উঠে আসা কিছু অদম্য তরুণের সাফল্যেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সেই দলের কোচের অবস্থা মধ্যবিত্ত ঘরের কর্তার মতোই, সাধ আছে অথচ সাধ্য নেই। ব্যাটসম্যানদের নিয়ে চিন্তা থেকেই যাচ্ছে, গতিশীল বোলারেরও আছে ঘাটতি; এমন সময় হাতে চোট নিয়ে দলের বাইরে সাকিব আল হাসান। এই সমস্যাগুলো সামাল দিতেই কোচের মাথা খারাপ হওয়ার দশা। তার ওপরে যদি যোগ হয় ছয় মাসেরও কম সময়ে তিনজন আলাদা আলাদা অধিনায়কের সঙ্গে কাজ করার ‘দুর্লভ সুযোগ’, তখন কী-ই বা আর করার আছে তাঁর! রোডসের কপালটা এমনই।

বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম মিশন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে, শুরুতে টেস্ট সিরিজে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এরপর ওয়ানডেতে মাশরাফি বিন মর্তুজা, আবার টি-টোয়েন্টিতে ফের সাকিব। এশিয়া কাপে ওয়ানডেতে আবারও মাশরাফি আর এবার জিম্বাবুয়ে সিরিজে সাকিব চোটের কারণে দলের বাইরে থাকায় অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহ। নেতৃত্বের এই মুখবদলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কার্যকর পরিকল্পনা বাস্তবায়নটাই নিজের পেশাদারি কোচিং ক্যারিয়ারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন ৫৫ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ কোচ। প্রতিটি অধিনায়কেরই ব্যক্তিত্ব, চরিত্র আলাদা। অত্যন্ত কম সময়ের ভেতর ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে এসে তাঁদের সঙ্গে বোঝাপড়া, তাঁদের মনস্তত্ত্বটা বুঝতে পারাটা খুবই সহজ কাজ হওয়ার কথা নয়। রোডস জোর দিয়েই বললেন, ‘কাজটা কঠিন, চ্যালেঞ্জিং, তবে আমাকে পারতেই হবে, কারণ পেশাদার কোচ হিসেবে এটাই আমার দায়িত্ব। যদি না পারি, তাহলে বুঝতে হবে আমি আমার কাজটা ঠিকঠাকমতো করছি না।’

মাশরাফি, সাকিব, মাহমুদ উল্লাহ। তিনজন তিন প্রজন্মের প্রতিনিধি। তিনজনের ব্যক্তিত্ব তিন রকম। রোডস তীক্ষ চোখে পর্যবেক্ষণ করেছেন তিনজনকেই। মাহমুদ উল্লাহকে এখনো মাঠে নেতৃত্ব দিতে দেখেননি, দেখেছেন বাকি দুজনকে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বললেন, ‘সহকর্মী হিসেবে সাকিব একজন অসাধারণ অধিনায়ক। আমি অনেক অধিনায়কের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের ভেতর কৌশলগত দিক থেকে সাকিব সেরা। তার কাছ থেকে আমি নিজেও অনেক কিছু শিখেছি।’ মাশরাফি সম্পর্কে রোডসের পর্যবেক্ষণ, ‘সহকর্মী হিসেবে মাশরাফিও অসাধারণ, সে সাকিবের চেয়ে আলাদা। প্রচণ্ড আবেগ আর গৌরব নিয়ে খেলে। এমন নয় যে সাকিবের এসব নেই, তবে মাশরাফিরটা দেখা যায়। মাশরাফি তার সতীর্থদের কাছ থেকেও একই রকমটা আশা করে এবং সেটা বের করে আনে। ও হচ্ছে একটা অকুতোভয় যোদ্ধার মতো, যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়।’ মাহমুদ উল্লাহকে মাঠে খেলোয়াড় হিসেবে দেখলেও নেতা হিসেবে পাচ্ছেন এই প্রথমবারের মতো, তাই এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি রোডস, ‘আমার তৃতীয় অধিনায়ক, শুরুর দিকের দিনগুলো সাধারণত অসাধারণই হয়। দল বাছাই নিয়ে আমরা একটা ছোট্ট বৈঠক করেছিলাম। আশা করেছিলাম নির্বাচকরা আমাদের সঙ্গে একমত হবে। খুব দ্রুতই ব্যাপারটা হয়েছিল এবং ভালোই ছিল। আশা করছি আমি আর রিয়াদ (মাহমুদ উল্লাহ) আজকে (কাল) আরেকটি বৈঠকে বসব।’

হাতের পাঁচটি আঙুল যেমন সমান হয় না, ঠিক সেভাবে তিন অধিনায়কের নেতৃত্ব দেওয়ার ধরনও যে এক হবে না, সেটাই অনুমিত। সেসব মাথায় রেখেই ‘ম্যান ম্যানেজমেন্ট’ করতে হচ্ছে রোডসকে। কাল নেটে ব্যাটসম্যানদের অনেকক্ষণ থ্রো-ডাউন করিয়ে নকিং করানোর পর ক্লান্ত হয়েই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে আসা রোডস বেশ লম্বা উত্তরই দিলেন, ‘বেশ ভালো কতগুলো প্রসঙ্গই তুলে এনেছেন সামনে, আমার ম্যান ম্যানেজমেন্ট দক্ষতার বেশ কড়া পরীক্ষাই নিচ্ছে এই ব্যাপারটা, যেটাকে বলে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা। এই বিষয়ে আমি কোনো বিশেষজ্ঞ নই, তবে আমি মনে করি যে মানুষটার সঙ্গে কাজ করতে হবে আমি তার ধ্যান-ধারণার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারব। কাজটা খুবই চ্যালেঞ্জিং, তবে আমার মনে হয় আমি পারব। প্রতিটা ব্যক্তিই আলাদা আর আমি যদি তাদের মতো করে আমার চরিত্রটাকে খাপ খাওয়াতে না পারি তাহলে বুঝতে হবে পেশাদার কোচ হিসেবে আমি ব্যর্থ। আমি সব সময়ই খেলোয়াড়দের বলি যে যখন কাউকে শেখাবে তখন সবাইকে একভাবে শেখাবে না। যাকে শেখাচ্ছ তার ব্যক্তিত্বের ধরনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে শেখাবে, কারণ সবাই একই রকম না।’

ভিন্ন দেশ, ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন সাংস্কৃতিক আবহ থেকে আসা রোডস মাস ছয়েকেরও কম সময়ে অনেকটাই বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাস্তবতা। তৃতীয় অধিনায়কের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারছেন, মাশরাফি বা সাকিবের সঙ্গে যেভাবে দলের কৌশল নির্ধারণ বা পরিকল্পনা করতে পারবেন, মাহমুদ উল্লাহকে নিয়ে তাঁকে হয়তো সেই একই পথে হাঁটলে চলবে না। ইংরেজ ব্যবস্থাপনার সুনাম আছে বিশ্বজুড়ে। প্রবাদ আছে, কোনো হোটেল যদি জার্মান প্রকৌশলীরা বানায়, ইংরেজ ব্যবস্থাপনায় চলে আর ফরাসি রাঁধুনিরা সেখানে রাঁধে তাহলে সেটা স্বর্গ, উল্টোটা হলে সাক্ষাৎ নরক! আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা আর ইংরেজ ব্যবস্থাপনার পাঠ, সব মিলিয়ে অধিনায়কের ত্রিকোণমিতিটা এখন পর্যন্ত ভালোই সামলাচ্ছেন রোডস। তবে বেশ তাড়াতাড়িই যে এই ত্রিভুজ বদলে যাবে সরলরেখায়, সেটাও কিন্তু স্পষ্ট তাঁর কথাতেই!

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com